প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২১, ১৯:৫৯
হাজীগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি পূজামন্ডপ পরিদর্শন
ধর্মীয় বিভেদ তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা যাবে না : শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি
ধর্মীয় বিভেদ তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা যাবে না। এটি একটি অপশক্তির কাজ এবং পরিকল্পিত ঘটনা। এটা শুধুমাত্র ধর্মীয় সম্প্রীতি ধ্বংস করা নয়, নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা মাত্র। তারা নানাভাবে চেষ্টা করেছে, কোন কিছুতেই যখন কাজ হচ্ছেনা
|আরো খবর
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে এমন ঘটনা ঘটার উচিত ছিল না। কিন্তু তারপরেও ঘটে গেছে। ৭১ এর পরাজিত অপশক্তি এবং ৭৫ এর ঘাতক তারাই কিন্তু কোন না কোন চেহারায় আমাদের এই ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার অপচেষ্ট চালাচ্ছে। বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উৎসবে হামলার মধ্য দিয়ে তারা দেশের স্থিতিশীলতা এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়। মঙ্গলবার হাজীগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্থ দুটি পূজা মন্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এমপি।
গত বুধবার হাজীগঞ্জে পূজামন্ডপে হামলা ও পুলিশ-জনতা সংঘর্ষের ঘটনায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের আশ্বস্ত করে মন্ত্রী বলেন, দেশের যেসব স্থানে এসব ঘটনা ঘটেছে এবং এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত আছে, সরকার অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। আমাদের প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আপনাদের পাশে আছে। আমরাও আছি। আমাদের স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও আপনারাসহ (গণমাধ্যম) আমাদের দলীয় নেতাকর্মীরা আপনাদের পাশে আছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্প্রীতি সমাবেশের ঢাক দিয়েছেন। আওয়ামী লীগও সম্প্রীতি সমাবেশের ডাক দিয়েছে এবং আজকে চাঁদপুরসহ সারাদেশে শান্তি শোভাযাত্রা হয়েছে। সেই কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আমি চাঁদপুর ও আজকে এখানে (হাজীগঞ্জ) এসেছি।
হাজীগঞ্জের শ্রী শ্রী রাজা লক্ষী নারায়ন জিউর আখড়ায় মন্ত্রী বলেন, তারা (অপশক্তি) ধর্মের উপর আঘাত হেনে এবং ধর্মীয় বিভেদ তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে সকল ধর্মের এবং শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে একযোগে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমি মনে করি প্রতিটি এলাকায় প্রত্যেক প্রতিবেশি তার প্রতিবেশীকে রক্ষা করবার জন্য সজাগ, সতর্ক ও সচেষ্ট এবং সক্রিয় থাকতে হবে। সেখানে গণমাধ্যমেরও একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। আমাদের সমাজে অন্তঃনিহিত অনেক শক্তি আছে। সেই শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। সরকার, প্রশাসন, পুলিশ সবাই যেমন মাঠে আছে, তেমনি আমাদের জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সমাজকর্মী, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, সংবাদকর্মী, পেশাজীবিসহ সর্বস্তরের জনসাধারনেকে মিলে প্রতিরোধ গড়ে তোলতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, অপশক্তি যে কোন জায়গায় এবং যে কোন ধর্মীয় উপাসনালয়ে আঘাত হানতে পারে। ভুলে গেলে হবে না, এই উগ্র সাম্প্রদায়ীক শক্তি রামুতে, আমাদের বাইতুল মোকাররম মসজিদেও আঘাত হেনেছিলো এবং পবিত্র কোরআন পুড়িয়েছিলো। কাজেই এই অপশক্তি কোন ধর্মের মানুষকেই রেহাই দেয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার করছে। সেটি যেন তারা করতে না পারে, এ জন্য আমাদের অনেক বেশি সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। দেখা গেছে, অনেকে না বুঝেও পোস্ট করছেন। এতে করে অস্থিতিশীল পরিবেশ ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
এই ধরনের ঘটনা আর যেন পুনরাবৃত্তি না হয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, পুলিশ এককভাবে সারাদেশের সবাইকে এককভাবে নিরাপত্তা দিতে পারবে না। প্রত্যেকে নিজের এবং প্রতিবেশির ঘর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমাদের সবাইকে অনেক বেশি সজাগ এবং সক্রিয় হতে হবে। বিদেশে বসে যে কোন কোন অপশক্তির এবং অপশক্তির ধারব-বাহক বিদেশে বসে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে এটি তো স্পষ্ট। তাদের বিভিন্ন কথা-বার্তা নানা জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। কাজেই কারা এই অপশক্তি, কারা ২০১৩, ২০১৪ সালে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। কারা আজকেও অস্থিতিশীল একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। যারা রাজনীতির নামে অপরাজনীতি করে এটি তাদের কাজ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ, পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, হাজীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী মাইনুদ্দিন, ফরিদগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল ইসলাম রোমান, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডাঃ জে আর ওয়াদুদ টিপু, কোষাধ্যক্ষ রোটাঃ আহসান হাবিব অরুন, হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব হেলাল উদ্দিন মিয়াজীসহ উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য কুমিল্লায় কোরআন অবমাননার বিষয়কে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাতে হাজীগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কে স্থানীয় কিছু তরুণ, কিছু যুব সমাজ ও কিছু মুসল্লি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের শ্রী শ্রী রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়া পুজামন্ডপ অতিক্রমকালে মিছিল থেকে কে বা কারা ইট-পাটকেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশ প্রতিরোধের চেষ্টা করে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং পুজামন্ডপের গেট ভাংচুরের চেষ্টা করায় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। এতে করে কিশোরসহ মোট ৪ জন ঘটনার দিন ও মঙ্গলবার ১ জন মিলিয়ে ৫ জন মারা যায়। একই ঘটনায় পুলিশের ১৭ জন সদস্য আহত হয়। নিহতরা হলেন, হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ১১নং ওয়ার্ড রান্ধুনীমূড়া গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে হৃদয় হোসেন (১৪), একই গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে আলামিন (১৮) ও আব্বাস উদ্দিনের ছেলে শামিম হোসেন (১৭) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের শামছুল হকের ছেলে মো. বাবলু (৩৫) ও হাজীগঞ্জে বসবাসকারি ট্রাক চালক ব্রাক্ষনবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার সাগর হোসেন (৩২) মারা যায়।
এ ঘটনায় পুলিশ ৪ টি মামলা দায়ের করেছে। এই সকল মামলায় ইতিমধ্যে ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। হাজীগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কারনে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে।